নওগাঁর ১১ উপজেলার অসচ্ছল, হতদরিদ্র, ঘরহীন, নদীভাঙনসহ বিভিন্ন দুর্যোগে গৃহহীন পরিবার, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারী, প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ২১১টি পরিবারকে এসব পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) ও টিআর (টেস্ট রিলিফ) কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থে মানবিক সহায়তায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, নওগাঁ সদর উপজেলায় ২০টি, পোরশা উপজেলায় ২৪টি, সাপাহার উপজেলায় ২৩টি, নিয়ামতপুর উপজেলায় ২২টি, পত্নীতলা উপজেলায় ২১টি, ধামইরহাট উপজেলায় ১৯টি, বদলগাছী উপজেলায় ১৭টি, মহাদেবপুর উপজেলায় ১৮টি, মান্দা উপজেলায় ১৭টি, রানীনগর উপজেলায় ১৫টি ও আত্রাই উপজেলায় ১৫টিসহ সর্বমোট ২১১টি বাড়ি নির্মাণ কাজ চলছে।
তিনি জানান, বাড়িগুলো ইটের গাঁথুনি দিয়ে হবে, কাঠের দরজা-জানালা, অত্যাধুনিক রঙিন টিনের ছাউনি, ১০ ফিট লম্বা ও ১০ ফিট আয়তনের ২ কক্ষের বাড়ি, একটি রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন।
নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের নামানুরপুর গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধী আলেয়া বেওয়া (৫০) বলেন, নিজের সামান্য জমি থাকলেও ঘর বানানোর সামর্থ নাই। বেঁচে আছি প্রতিবন্ধী ভাতা আর গ্রামের মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে। জন্ম থেকেই ঝুপড়ির মধ্যে বসবাস করে আসছি। সরকারি খরচে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি পাওয়ার শেষ জীবনটা হবে সুখের, নতুন বাড়িতে ভালভাবে থাকতে পারবো।
একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের ভিক্ষুক আব্দুল জব্বার (৭৫) বলেন, অনেকদিন আশ্রয়হীন ছিলাম, ভিক্ষা করে দিন কাটতো। ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বৃদ্ধ হয়েছি। বয়সের ভারে এখন আর চলতে পারিনা। মানুষের দয়া আর দানের ওপর কোন মতে বেচে আছি। সরকারের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আমার সামান্য জমিতে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে, শেষ বয়সে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাতে পারবো।
নওগাঁর পোরশা উপজেলা সদরের নিতপুর গ্রামের বাদাম বিক্রেতা ফিটি (৭০) বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক সামগ্রী কুড়িয়ে বিক্রি করা সামান্য টাকা আর বাদাম বিক্রি করে আমার দিন চলে। সংসারে আপন বলে কেউ নেই। কোন রকমে টিনের ছাপড়ার নিচে বসবাস করছি। পৈতৃক সূত্রে সামান্য জমি আছে, কিন্তু ঘর বানানোর সামর্থ নাই। সরকারি টাকায় পিআইও অফিস ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। এটাই আমার কাছে রাজপ্রসাদ। ঘর পেয়ে আমি খুব খুশি।
নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় ২১১টি পরিবারের মধ্যে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি করে দিচ্ছে সরকার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয়েছিল। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ৪১ টাকা।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ব্যবস্থা ও রান্নাঘর সুবিধাসহ এসব বাড়ি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত প্রতিরোধে সক্ষম। কোন মানুষ যেন বাস্তুহারা না থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার ।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনব ও চমৎকার একটি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে, গ্রামের এই পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রা পরিবর্তন করা।
তিনি জানান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সম্মলিতভাবে এ কর্মসূচি সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। অতি শিগগিরই তাদের বাড়ি হস্তান্তর করা হবে।